কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম সবচেয়ে ভালো?

সিরাম ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিন

স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের মধ্যে সিরামের নাম তো খুব শুনেছেন! কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছেন না যে কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম সবচেয়ে ভালো?

কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম?

একটি হেলদি ও ন্যাচারাল স্কিন পেতে সিরাম খুবই কার্যকরী। তবে সবার জন্য সব সিরাম ব্যবহারযোগ্য না - এটি আপনার ত্বকের ধরণের উপর নির্ভর করবে।

কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম সবচেয়ে ভালো?

ত্বকে নতুন কোন কিছু অ্যাপ্লাই করতে ভয় পাচ্ছেন? আসলে এটা খুবই স্বাভাবিক। আমাদের মুখের ত্বক শরীরের বাকী অংশের তুলনায় সেনসিটিভ। তাই মুখে কোনোকিছু ব্যবহারের আগে অবশ্যই জেনে নেওয়া ভালো যে কোনটি আপনার জন্য কতটুকু সুইট্যাবল এবং আপনার ত্বকে আসলে কোনটি প্রয়োজন।

বাজারে এখন অনেক উপাদানের সিরাম এসেছে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উপাদানে তৈরি করা হয়েছে এগুলো। উদাহরণস্বরূপ শুষ্ক/ডিহাইড্রেটেড ত্বক একটি ময়েশ্চারাইজিং/হাইড্রেটিং ফেইস সিরাম থেকে উপকৃত হবে, যখন তৈলাক্ত বা ব্রণ-প্রবণ ত্বক একটি এক্সফোলিয়েটিং ফর্মুলেশনে ভাল ফলাফল পেতে পারে। আর আপনার জন্য কোনটি? আসুন জেনে নেই - 

ড্রাই স্কিনের জন্য সিরাম

পাতলা, শুষ্ক বা ড্রাই স্কিনে অনেক সময় মশ্চারাইজারও কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এসব ত্বকে লম্বা সময় আর্দ্রতা ধরে রাখার প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে শীতকালে আমরা অনেকেই শুষ্ক, ফ্লিকি, ডাল স্কিন নিয়ে বিরক্ত হয়ে যাই। কিছুতেই যেন কাজ হয় না! হায়ালুরোনিক অ্যাসিড যা সোডিয়াম হায়ালুরোনেট নামেও পরিচিত-এটি একটি শক্তিশালী হিউমিডিফায়ার যা ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায়। 

এটি ত্বককে পুরু করে এবং খুব ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখতে সক্ষম। সেই সাথে এটি আপনার মুখের বলিরেখা বা রিংকেলও দুর করবে। সতেজ প্রাণবন্ত স্কিন পেতে এর বিকল্প নেই!

হায়ালুরোনিক এসিড সিরাম কখন ব্যবহার করবো?

হায়ালুরনিক এসিড সিরাম আপনি সকালে বা রাতে যে কোন একটি সময়ে লাগাতে পারেন। এবং প্রয়োজন বুঝে আপনি চাইলে প্রতিদিন এটি আপনার স্কিনকেয়ার রুটিনে রাখতে পারেন।

ত্বক সুন্দর রাখার উপায় - এক্সফোলিয়েট সিরাম

এক্সফোলিয়েশন হল আপনার ত্বকের উপর থেকে মৃত কোষ অপসারণের প্রক্রিয়া। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন অর্থাৎ স্ক্র্যাবিং এ আমরা সবাই পরিচিত, তবে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন নিয়ে আমরা কি সঠিক জানি?

কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন মূলত স্ক্র্যাবিং এর চেয়ে দারুণ কাজ করে। 

এক্সফোলিয়েট সিরামের সুবিধা 

কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন ত্বকের পোর কমাতে সাহায্য করে, ত্বকের অতিরিক্ত তৈল দূর করে, আপনার ত্বককে উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার রাখে। সেই সাথে আপনার পরবর্তী টপিকাল ট্রিটমেন্টগুলোকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য সাহায্য করে যেমন - এর পরে কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন। এর উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে -  

  • আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) সিরাম
  • বিটা হাইড্রক্সি এসিড (BHA) সিরাম
  • স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সিরাম

কেমন ত্বকে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েট সিরাম করতে হয়?

  1. একনি প্রন স্কিন বা ব্রনযুক্ত ত্বকে
  2. ব্ল্যাকহেডস এবং ওপেন পোরস এর সমস্যা থাকলে
  3. তৈলাক্ত এবং ব্রেকআউট প্রবণ ত্বকে
  4. একটি এক্সফোলিয়েটিং সিরাম যা সিবামের মাত্রা কমায়, এটি আপনার স্কিন কেয়ারে একটি চমৎকার সংযোজন

এক্সফোলিয়েট সিরাম কখন ব্যবহার করবো?

এক্সফোলিয়েট সিরাম সপ্তাহ দুইবারের বেশী ব্যবহার করা যাবেনা। নতুবা বেশি এক্সফোলিয়েশনের কারণে স্কিন পাতলা হয়ে যেতে পারে এবং অবশ্যই রাতে ব্যবহার করা ভালো। 

মুখ ফর্সা করার সিরাম

একটি ব্রাইট ও গ্লোয়িং ত্বক কে না চায়? ফর্সা করার সিরামগুলো মূলত হাইপারপিগমেন্টেশনকে টার্গেট করে, বিবর্ণতা কমাতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডিজাইন করা হয়েছে। 

ব্রাইটেনিং সিরাম হলোঃ ভিটামিন সি 

ভিটামিন-সি স্বাস্থ্যকর ত্বকের কোষের টার্নওভার করে এবং মেলানিন(যা ত্বকের কালচে ভাবের জন্য দায়ী) উৎপাদনের জন্য দায়ী এনজাইমকে ব্লক করে আপনাকে উজ্জ্বল হতে সাহায্য করে। সুতরাং এটি হতে পারে আপনার একটি দুর্দান্ত চয়েজ যদি আপনি সান বার্ন এমনকি লাল দাগযুক্ত ত্বকের উপস্থিতি দূর করতে চান।

  • নিয়াসিনামাইড
  • নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩ নামেও পরিচিত)

এটি নিস্তেজ এবং অসম ত্বকের স্তর মোকাবেলার জন্য বিখ্যাত। এটি আপনার ত্বকের ওপেন পোরস গুলো ছোট করতে পারে। ভিটামিন-সি এর পরিবর্তে এটা একটি অন্যতম চয়েজ। কারণ ভিটামিন সি সিরাম অনেকজনকে স্যুট করে না এবং ত্বকে রিয়েকশন করে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে নিয়াসিনামাইড আবার সাধারণত সব ধরনের ত্বকে ভালোভাবে স্যুট করে।

ব্রাইটেনিং সিরামের ব্যবহার

ব্রাইটেনিং সিরাম রেগুলার ইউজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং আপনার প্রতিদিনের স্কিন কেয়ারে আপনি এটি সকালে এবং রাতে ব্যবহার করতে পারেন। তবে দিনে ব্যবহার করলে সিরাম লাগানোর ঠিক ১০ মিনিট পর সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না কিন্তু!

এন্টি এজিং সিরাম

এমন যদি হতো, সেই ষোড়শী রূপলাবণ্য অমলিন থাকতো? যদি ত্বকে ভাজ না পড়তো?

আপনার ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখতে রেটিনল (ভিটামিন-এ) সিরাম একটি বিস্ময়কর উপাদান! স্কিনে এজিং আসছে সেটা কীভাবে বুঝবেন? ত্বকে ভাঁজ পড়বে, বলিরেখা দেখা দিবে, ত্বক ঝুলে যাবে কিংবা পিগমেন্টস দেখা দিবে।

রেটিনল আপনার ত্বকের বলিরেখা বা রিংকেল কমাতে একটি জাদুকরী উপাদান! ত্বকের ঝুলে যাওয়া রোধ করবে, চামড়া টান টান করে, সেই সাথে আপনি উপহার হিসেবে পাবেন তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বল ত্বক!

রেটিনল সিরাম ব্যবহারের সুবিধা

সুখবর হলো বেশিরভাগ ত্বকেই রেটিনল সুইটেবল। রেটিনল সিরাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেগুলো হচ্ছে - 

  • ভিটামিন-সি সিরামের মতো হাই কনসেন্ট্রেশনে ত্বকে ইরিটেশন বা জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই যারা একদম প্রথমবারের মতো রেটিনল সিরাম ব্যবহার করতে যাচ্ছেন তারা ০.১%-০.৫% কনসেনট্রেশনের সিরাম দিয়ে শুরু করবেন। 
  • দিনের বেলায় রেটিনল সিরাম ব্যবহার করবেন না।
  • সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশী রেটিনল ব্যবহার করবেন না।
  • রাতে রেটিনল ব্যবহার করলে দিনে সানস্ক্রিন না লাগিয়ে বাইরে যাবেন না। বরং দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহারে পাবেন ডাবল বেনিফিট!

কি? মনে হচ্ছে আপনার ত্বকের সমস্যা এবার সমাধান হবেই? জি। আমরাও তাই আশা করছি। তবে যে কোন স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট শুরুর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চললে ত্বকের ক্ষতি এড়াতে পারবেন বলে আশা করা যায়। যেমন -  

  • ত্বকে নতুন কিছু সংযোজনের আগে এর উপাদান এবং এক্সপায়ার ডেট দেখে নিন।
  • ত্বকে অ্যাপ্লাই করার আগে অবশ্যই ত্বককে ভালো ভাবে ক্লিন করুন। ময়লা বা তৈলাক্ত ত্বকে সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেছেন, তো মরেছেন!
  • তবে স্বল্প মাত্রায় আস্তে আস্তে শুরু করুন।
  • শুরু থেকেই প্রতিদিন ব্যবহার না করে গ্যাপ দিয়ে আস্তে আস্তে আপনার ত্বকে অ্যাডজাস্ট হওয়ার সময় দিন।
  • রিএ্যাকশন দেখা দিলে সাথে সাথেই সেই প্রোডাক্ট ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
  • নতুন কোন ব্র্যান্ড ট্রাই করার আগে রিভিউ দেখে নিন।
  • অরিজিনাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। 

শেষ কথা - ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো সিরাম 

সিরাম নির্বাচনের আগে আপনার ত্বকের ধরণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। এখানে আমরা কোন নির্দিষ্ট কোম্পানির সিরামের নাম বলিনি। কিন্তু আপনি কেনার সময় অবশ্যই অথেনটিক ও আসল সিরাম কিনবেন। ভালো ফলাফল পেতে নিয়ম মেনে ব্যবহার করুন। 

আপনি যদি সিরাম সিলেক্ট করতে না পারেন তাহলে আপনার স্কিনের ধরণ কমেন্টে জানান। আমাদের এক্সপার্ট টিম আপনাকে কোন উপাদানযুক্ত সিরাম উইজ করবেন তা বলে দিবে।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url