১ দিনে গালে ব্রণ দূর করার উপায় ২০২৪

২০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

ব্রণের সমস্যার ঘরোয়া ও নিরাপদ সমাধান চান? তাহলে ১ দিনে গালে ব্রণ দূর করার উপায় জেনে নিন।

মুখের ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

মুখের ত্বক শরীরের অন্যান্য জায়গার ত্বকের তুলনায় দশগুণ নাজুক। মুখের ত্বক তুলনামূলক পাতলা এবং বেশী সংবেদনশীল হওয়ায় খুব সহজেই এতে জীবানু আক্রমন করতে পারে।

এই পোস্টে আমি এক রাতে ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় শেয়ার করেছি। এখানে আপনি হাতের কাছে থাকা অর্গানিক জিনিস দিয়ে ব্রণের ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারবেন।

ব্রণ কী? | ব্রণ কেন হয়?

আমাদের মুখের স্কিন বেশ নাজুক হওয়ার কারণে দিতে হয় একটু এক্সট্রা কেয়ার। কিন্তু যদি সেই কেয়ারে ঘাটতি পরে যেমনঃ ধুলো ময়লা, তেল, ঘাম জমে থাকা জীবাণু, মেকাপ করার পরে ডাবল ক্লিনজিং না করে ঘুমাতে যাওয়া। এভাবে জীবাণু জন্মে এবং ব্রণের দেখা দেয়।

  • বয়ঃসন্ধি কালে হঠাৎ হরমোনের উঠানামা শুরু হয়। এই হরমোনাল তারতম্যের কারণে ব্রণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত তেলে ভাজ খাবার ব্রণের অন্যতম কারণ। 
  • টেনশন, এ্যাংজাইটি এবং নিদ্রাহীনতার জন্য যে কোন বয়সে ব্রণ দেখা দিতে পারে । 
  • পানি কম খাওয়ার কারণে আপনার শরীরের দূষিত পদার্থ বের হতে পারে না। তাই ডিহাইড্রেশনও ব্রণের জন্য দায়ী।
  • বর্তমানে বাজারে খুব বাজে মানের এবং নকল মেকাপ প্রডাক্ট পাওয়া যায় যা আপনার ত্বকে ব্রণ তৈরী করার জন্য যথেষ্ট। 
  • তাছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় জেনেটিক কারণেও ব্রণ হয়।

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

মুখের ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় জানার আগে আপনার ব্রণের ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি ব্রণের ধরন না জানেন আর সেনসিটিভ স্কিন হয় তবে একদম প্রাকৃতিক উপায়গুলো আগে ট্রাই করবেন। 

বরফ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

ফ্রিজে আইস ট্রে অথবা সিলিকনের আইস রোলার ব্যাগে পানি রেখে বরফ জমাবেন। এরপর আক্রান্ত স্থানে খুব আলতোভাবে ২-৫ মিনিট ম্যাসাজ করবেন। স্কিনের অন্যান্য জায়গায়ও বরফ ম্যাসাজ করতে পারেন। 

যদি ব্রণের সমস্যা খুব বেশি হয় তবে দিনে ২ বার করতে পারেন। তবে ২ বারের বেশি না করাই ভালো। গালে ব্রণের গর্ত থাকলে সরাসরি বরফ ঘষবেন না; একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ নিয়ে সেটা আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করবেন।

টুথপেস্ট দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

১ দিনে ব্রণের দাগ দূর করার জন্এয টি খুবই জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। - ব্রণের জায়গায় টুথপেস্ট লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন আর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন ব্রণ নেই! 

তবে টুথপেস্ট লাগালে আপনার ব্রণের জায়গায় কালো দাগ দেখা দিবে। এবার নিজে চিন্তা করে দেখুন আপনি কোনটা চান? ব্রণ সারিয়ে কালো দাগ আনতে নাকি ব্রণ রেখে দিতে? কি মুশকিল! চলুন আরও দারুণ টোটকা জেনে নেওয়া যাক। 

লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

লেবুর অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট এবং এক্সফোলিয়েটিং বৈশিষ্ট্যের জন্য লেবুর রস ব্রণের চিকিৎসায় একটি অ্যাওয়ার্ড উইনিং উপাদান বলা যায়।

একটি পাত্রে একটি লেবু ছেঁকে নিন এবং তাতে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল যোগ মিশাবেন। এই মিশ্রণটি একটি তুলা বা টিস্যু দিয়ে মুখের ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান।

এটি শুধু ব্রণ রক্ষা করবে না বরং উজ্জ্বল ত্বকে সাহায্য করবে এবং দাগ কমাতেও সাহায্য করবে। ব্রণ এবং ব্রণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এটি একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক উপায়! তবে যাদের স্কিনে লেবু লাগালে জ্বালাপোড়া হয় তাঁরা গোলাপ জলের সমপরিমাণ তরল দুধ মিশিয়ে নিবেন।

অ্যালোভেরা দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়

ব্রণের চিকিৎসা তো একটু জেনে নিলেন। এবার চলুন অ্যালোভেরা দিয়ে ব্রণের কালো দাগ দূর করার উপায় জানা যাক। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদের স্কিনে ব্রণের দাগ নেই এমন মানুষ পাওয়া যাবে না।

বাজারে বিক্রি করা অ্যালোভেরা অথবা অ্যালোভেরা জেল (৯৮% বা তার বেশি পিওর অ্যালোভেরা আছে এমন) কিনে কাজটি করতে পারবেন। অ্যালোভেরা আপনি সরাসরি মুখে ম্যাসাজ করতে পারেন তবে আমি দারুণ একটি পদ্ধতি শেয়ার করবো। 

প্রথমে ৫-১০ চামচ অ্যালোভেরা নিবেন, এর সাথে ১-২ চামচ কোকোনাট ওয়েল (বাসায় বানানো) মিশিয়ে ১ কাপের দ্রবণ বানিয়ে নিবেন। যদি ওয়েলি স্কিন হয় তবে কোকোনাট ওয়েল স্কিপ করে দুধ মিশাতে পারেন।

এবার আপনার বানানো দ্রবণটি বরফ ট্রেতে রেখে দিয়ে আইস কিউব করে নিন। প্রতিদিন ২ বেলা ম্যাসাজ করলে আপনার স্কিন আপনাকে ধন্যবাদ দিবে। এই কাজ করলে আলাদা করে আর বরফও ম্যাসাজ করতে হবে না। 

ব্রণ দূর করতে পুদিনা পাতার উপকারিতা

পুদিনা মুখের ছিদ্র বা পোরস ছোট করতে সাহায্য করে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের উপর নজর রাখতে সাহায্য করে। একটি ব্রণ পরিষ্কার মুখ বজায় রাখতে সাহায্য করার জন্য প্রায় দুই টেবিল চামচ সূক্ষ্মভাবে কাটা তাজা পুদিনা এবং দুই টেবিল চামচ দই এবং ওটমিল মিশিয়ে নিন।

একটি মসৃণ পেস্ট বানিয়ে মুখের চোখের এরিয়া বাদে সব জায়গায় লাগিয়ে নিন। এটিকে দশ মিনিটের জন্য শুকানোর জন্য ছেড়ে দিন এবং তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

মধু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

পুষ্টির এই পাওয়ার হাউসটি ব্রণ এবং পিম্পলের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একটি ভাল প্রাকৃতিক নিয়ামক। খাঁটি মধু সরাসরি ব্রণে প্রয়োগ করুন এবং এটি শুকাতে দিন। 

এক ঘন্টার মধ্যে ধুয়ে ফেলুন! মধুর আঠালোতা ত্বকের ছিদ্র থেকে অতিরিক্ত ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। মধু একটি ভালো মশ্চারাইজারও বটে।

রসুন দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

এক কোয়া রসুনের ঠিক মাঝখান বরাবর কেটে পরিষ্কার মুখে সরাসরি সেই রসুনের কষটি লাগান। এভাবে সারারাত রেখে দিন। এটা খুব কার্যকর পদ্ধতি ব্রণের চিকিৎসায়।

আদতে শুধু বাইরে থেকে ত্বকের পরিচর্যা করলেই ব্রণ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। এর জন্য দরকার আরও কিছু যত্ন যা আপনাকে ভেতর থেকে সাহায্য করবে।

আপনি চাইলে প্রতিদিন এক কোয়া করে রসুন খেতে পারেন। রসুন ভাত, মুড়ি কিংবা যেকোনো খাবারের সাথে খেতে পারবেন। তবে সকালে খালি পেতে খেলে আরও উপকার কারণ এতে রয়েছে শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট। 

কি করলে ব্রণ ভালো হবে?

সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং বাইরে থেকে এসেই ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। যারা অনেক বেশী ঘামান তারা বাইরে গেলে ভেজা সফট ফেসিয়াল টিস্যুর মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার রাখবেন। ত্বকে ঘাম জমতে দেওয়া যাবেনা।

আপনার বালিশের কভার ২দিন পর পর পরিবর্তন করুন এবং সাথে আপনার মোবাইলের স্ক্রিনের উপর জমে থাকা ময়লা বা ধুলাও পরিষ্কার করুন। 

যদি হিজাব, ইনার ক্যাপ, কাপড়ের ফেইস মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেগুলো প্রতিদিন পরিষ্কার করুন। অপরিষ্কার মাস্ক / হিজাবের ইনার ক্যাপে ঘাম লেগে থাকলে সেই জীবাণু থেকে ব্রণ হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

আপনার ব্যবহার করা সকল মেকাপ ও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার আগে অথেনটিক ফেসবুক পেজ যাচাই করে নিন। যেখান সেখান থেকে এসব প্রোডাক্ট কিনে স্কিনের বারোটা বাজাবেন না। প্রত্যেকবার ব্যবহারের আগে এক্সপায়ার ডেট দেখে নিন।

এছাড়া ব্রণ দূর করার ঘরোয়া আরও কিছু উপায় আছে যা আপনি মেনে চললে উপকার পাবেন - 
  • সকল রকম ভাজাপোড়া এবং ফাস্ট ফুড বন্ধ করে দিন।
  • মাথায় তৈল দিয়ে রাতে ঘুমাত যাবেন না কখনো।
  • রাত ১১টায় রুমের বাতি বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। অধিক রাত জাগা ব্রণের অন্যতম কারণ।
  • সারা দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  • হরমোনাল বা জেনেটিক কারণে ব্রণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শরীরের সবচেয়ে নাজুক ত্বকের যেন অযত্ন না হয়! আপনার এই নাজুক ত্বকের যত্নে এবং কার্যকর তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url