ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম | ক্যাস্টর অয়েল এর দাম কত

ক্যাস্টর বিন থেকে ক্যাস্টর অয়েল বের করা হয় যা রিসিনাস কমিউনিস উদ্ভিদের বীজ। এই পোস্টে আপনি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

রূপচর্চায় ক্যাস্টর অয়েলের ১০টি ব্যবহার ও নিয়ম

ক্যাস্টর অয়েল ওমেগা-৬, ওমেগা-৯ এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ যার অর্থ এটি একটি পুষ্টিকর এবং হাইড্রেটিং উপাদান। ক্যাস্টর অয়েলে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এর উচ্চ রিকিনোলিক এসিড সামগ্রীর জন্য।

ক্যাস্টর অয়েল এর উপকারিতা

ক্যাস্টর অয়েল যা রেড়ির তেল নামেও পরিচিত - এটি একটি বহুবিধ ব্যবহারযোগ্য তেল যা স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের জন্য বিভিন্ন উন্নতি সাধন করে। আপনি কি জানেন? এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ক্যাস্টর অয়েলের ম্যাসাজ ব্যথা কমানোর জন্য দারুণ কার্যকরী!

এবার চলুন ক্যাস্টর অয়েল এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক - 

ক্যাস্টর অয়েল চুলে কিভাবে ব্যবহার করব

চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল অনন্য। এটি চুলের জন্য একটি ভালো মশ্চারাইজার।

  • চুলের জন্য প্রাথমিক ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা হল এটি চুলের উজ্জ্বলতা তৈরি করতে সাহায্য করে। 
  • বর্তমানে এ্যালোপেসিয়া বা চুল পড়ে মাথা খালি হয়ে যাওয়া একটি মারাত্মক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে রয়েছে ক্যাস্টর অয়েলের অসাধারণ ভুমিকা।
  • তাছাড়া আইব্রো এবং আইল্যাশ বা চোখের পাপড়ি ঘন করতেও এটি কার্যকর।
আপনি ক্যাস্টর অয়েল সরাসরি আপনার চুলের প্রান্তে লাগাতে পারেন যাতে কিউটিকল সিল করতে এবং শুষ্ক ও স্প্লিটেন হেয়ার বা ফাটা আগা রোধ হয়। আপনি এটি আপনার চুল জুড়ে লাগাতে পারেন ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

চুলের রুক্ষতা দূর করতে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনারের সাথে এক চামুচ ক্যাস্টর মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এটি খুবই ভালো কাজ করবে।

ক্যাস্টর অয়েলের নিয়মিত ব্যবহার আপনার চুলকে অকালে পেকে যেতে বাধা দিবে। তাই সময় থাকতেই চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার শুরু করুন।

ড্যান্ড্রাফ দূর করে মাথার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে

ক্যাস্টর অয়েল এত ময়শ্চারাইজিং এবং এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য এত প্রকট যে এটি মাথার ত্বকের খুশকির বিরুদ্ধে এবং শুষ্কতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি আপনার মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করা এরিয়াকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং খুশকি, ফুসকুড়ি ও জ্বালাপোড়া কমায়। ভালো ফলাফলের জন্য একটি স্ক্যাল্প ম্যাসাজারের সাথে তেলটি যুক্ত করে ব্যবহার করুন।

রোদে পোড়া ত্বক রিপেয়ার

যদিও রোদে পোড়া প্রশান্তিদায়ক চিকিৎসায় ঘৃতকুমারীবা অ্যালোভেরা বেশী কাজ করে তবে অনেকের ত্বকে অ্যালোভেরা সুট করেনা। এক্ষেত্রে ক্যাস্টর অয়েল হল আরেকটি কার্যকর উপাদান যা আপনি চেষ্টা করতে পারেন। যখন ক্যাস্টর অয়েল সরাসরি রোদে পোড়া ত্বকে প্রয়োগ করা হয়, তখন আপনি একটি হালকা শীতল অনুভূতি অনুভব করবেন। এদিকে এতে থাকা রিসিনিক অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

শরীরের যেকোনো জায়গায় ময়শ্চারাইজ করুন

আপনি ফাটা হিল, শেভ-পরবর্তী শুষ্কতা, বা বাহু, পা, ঘাড়, ঠোঁট বা পেটের ফ্ল্যাকি শুকনো ত্বকের সাথে লড়াই করছেন? ক্যাস্টর অয়েল একটি সমৃদ্ধ, হাইড্রেটেড-দ্রুত ময়েশ্চারাইজার হিসাবে দ্বিগুণ হতে পারে। এটি একটি হিউমেক্ট্যান্ট, যার মানে যেখানে এটি প্রয়োগ করা হয় সেখানে আর্দ্রতা ধরে রাখে। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড, ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্পর্শে নরম রাখে।

ত্বকে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম

ক্যাস্টর অয়েল আপনি প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার পূর্বে মুখ ক্লিন করে সারকুলার মোশনে বা হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি আপনার ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে টান টান রাখবে এবং অনাকাঙ্খিত বলিরেখা বা বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দিবে।

ব্রণের চিকিৎসায় ক্যাস্টর অয়েল

ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডসের দাগ এর চিকিৎসায় এটি বযবহার হয়। অথবা আপনি একটি ময়েশ্চারাইজার এবং ব্রণ-প্রতিরোধী চিকিৎসা হিসাবে আপনার মুখে একটি পাতলা স্তর প্রয়োগ করতে পারেন। 

আমাদের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা একটি বিচক্ষণ জায়গায় স্পট টেস্ট করার পরামর্শ দেন - আপনার কানের পিছনে বা আপনার চিবুকের নিচে নিখুঁত এবং মুখের বাকি অংশে এটি প্রয়োগ করার আগে একদিন অপেক্ষা করুন। যদি আপনাক সুট করে তবে এই চিকিৎসা চালিয়ে যান ব্রনের চিকিৎসায়।

ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন প্রোডাকশনের কারণে তৈরী হয় পিগমেন্ট, ছোপ ছোপ দাগ এবং কালচে ভাব। ক্যাস্টর অয়েল আপনার এসব দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।

স্ট্রেস মার্ক প্রতিরোধ

প্রেগনেন্সিতে স্রেচ মার্স পড়েনি এমন মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন,বয়ঃসন্ধি কাল এবং কিছু হরমোনাল প্রভাবেও স্ট্রেচ মার্ক আসতে পারে। এই স্ট্রেচ মার্ক আসার আগেই আপনাকে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার শুরু করতে হবে। 

আপনি যখন দেখতে পাবেন যে আপনার তলপেট,হাটু,কাঁধ এসব যায়গায় কেমন যেন সাদা বা গোলাপী ফাটল ধরতে শুরু করেছে তখন থেকেই ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার শুরু করুন। এটি আপনার স্ট্রেচ মার্কটিকে পার্মানেন্টলি বসতে দিবেনা এবং চামড়া কুঁচকে ফেলাও রোধ করবে।

ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ এবং অ্যালার্জি দুর করতে সাহায্য করে

চর্মরোগ বিভাগে এমন রোগীর অভাব নেই। ফুঁসকুড়ি ও লালচে ভাব, চুলকানো, শুষ্ক ইচি স্কিনের জন্য অন্যতম একট প্রাকৃতিক চিকিৎসার নাম ক্যাস্টর অয়েল। শরীরের যে কোন জায়গায় ইরিটেশন বা জ্বালাপোড়া, প্রদাহ এবং বিভিন্ন চর্মরোগ যেমন সোরিয়াসিস, এক্সিমা ইত্যাদি রোগেও ক্যাস্টর বেশ জনপ্রিয় এবং কার্যকর নিরাময়।

অরিজিনাল ক্যাস্টর অয়েল চেনার উপায়

অরিজিনাল ক্যাস্টর অয়েল চেনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করা উচিত। এখানে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো যা আপনাকে আসল ক্যাস্টর অয়েল চেনার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেঃ 

১. অরিজিনাল ক্যাস্টর অয়েল সাধারণত হালকা হলুদ বা স্বচ্ছ রঙের হয়।

২. এটির গন্ধ খুবই হালকা এবং তীব্র নয়। যদি তেলে খুব বেশি গন্ধ থাকে তাহলে তা সন্দেহজনক হতে পারে।

৩. অরিজিনাল ক্যাস্টর অয়েল সাধারণত ঘন এবং আঠালো হয়। এটি সহজে প্রবাহিত হয় না এবং হাতে নিয়ে দেখলে তা ধীরে ধীরে পড়ে যায়।

৪. একটি ছোট পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল পানিতে ফেলুন। যদি এটি দ্রুত পানির সাথে মিশে যায় তবে সেটি ভেজাল হতে পারে। আসল ক্যাস্টর অয়েল পানির উপর ভাসবে।

শেষ কথা - ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম

চুল এবং ত্বকের যত্নে প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যবহার রয়েছে। রিসিনোলিক এসিড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের কারণে এর আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা অসীম। তাই একে প্রাকৃতিক মশ্চারাইজার বলা হয়।
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url