২০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

ঝুলে যাওয়া ব্রেস্ট টাইট করার ১০টি উপায়

সকালে খান রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো এবং রাতে ভিখারীর মতো। বেশ জনপ্রিয় এই প্রবাদটি! ২০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট জানার আগে সকালের খাবারে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে এইটুকু জেনে নিন।

২০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

অনেক পুষ্টিবিদের মতে, সকালে ঠিকমত না খেলে বুদ্ধি কমে! কিন্তু আমরা তো সকালে খেতে হয় তাই বোধহয় জানি না। বিশেষ করে বাচ্চারা সকালে না খেলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সুচারুরূপে হয় না।

২০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট 

২০ কেজি ওজন কমানোর জন্য একটি পার্সোনাল ডায়েট চার্ট তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ডায়েট চার্টটি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এখানে একটি কার্যকরী ডায়েট চার্ট দিচ্ছি যা অনুসরণ করলে কোন প্রকারের ক্ষতি ছাড়াই ওজন কমাতে পারবেন।

সাধারণ নির্দেশনা (এগুলো মানতেই হবে):

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন (৮-১০ গ্লাস)।
  • খাবারের আগে ২ গ্লাস পানি পান করুন।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনি এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন (যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম)।
দিনসকালবিকেলদুপুরসন্ধ্যারাত
১ম দিন১ কাপ ওটস (দুধ ছাড়া)
১টি আপেল
১ কাপ গ্রিন টি (চিনি ছাড়া)
অল্প বাদাম
১ কাপ ভাত / ২টি রুটি
১ বাটি সবজি (ব্রোকলি, গাজর)
১/২ কাপ দাল
১ কাপ দই১ প্লেট সালাদ (শসা, গাজর, টমেটো)
১ টুকরা মাছ / মুরগীর মাংস
২য় দিনএক পিস সেদ্ধ ডিম
এক বাটি জাম্বুরা
এক কাপ গ্রিন টি
অল্প ড্রাই ফ্রুটস
ভাত / রুটি
মিক্সড সবজি
এক কাপ দাল
এক কাপ লেবুর পানিসালাদ এবং হালকা সবজি ভাজি
৩য় দিনএক পিস পুডিংএক কাপ গ্রিন টি
২ পিস খেজুর
ভাত / রুটি
মাছের ঝোল এবং সবজি
এক টুকরা ফল (আপেল বা কমলা)সালাদ এবং হালকা সবজি ভাজি
৪র্থ দিনএকটি সেদ্ধ ডিম
এক বাটি ফল
এক কাপ গ্রিন টি
২ পিস বিস্কুট
ভাত / রুটি
মিক্সড সবজি এবং দাল
এক কাপ দইসালাদ এবং হালকা সবজি ভাজি
৫ম দিনএকটি কলা
এক কাপ দুধ
এক কাপ গ্রিন টি
অল্প আঙ্গুর ফল
ভাত / রুটি
মাছের ঝোল এবং সবজি
এক টুকরা ফল (আপেল বা কমলা)সালাদ এবং হালকা সবজি ভাজি
৬ষ্ঠ দিনএকটি সেদ্ধ ডিম
একটি আপেল
এক কাপ গ্রিন টি
৫ পিস শসা
ভাত / রুটি
মিক্সড সবজি এবং দাল
এক কাপ লেবুর পানিসালাদ এবং হালকা সবজি ভাজি
৭ম দিন১ কাপ ওটস (দুধ ছাড়া)
একটি কলা
এক কাপ গ্রিন টি
একটি পিঠা (মিষ্টি ছাড়া)
ভাত / রুটি
মাছের ঝোল এবং সবজি
এক টুকরা ফল (আপেল বা কমলা)সালাদ এবং হালকা সবজি ভাজি
এভাবে করে ২০ দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে। এই রুটিন শতভাগ সুস্থ মানুষদের জন্য। আপনার কোন রোগ থাকলে অবশ্যই এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

সকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কুসুম গরম পানি পান করুন। চিয়া সিডস ও তোকমা ভেজানো এক গ্লাস পানিও পান করতে পারেন অথবা হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু-মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডিটক্স ওয়াটারও জনপ্রিয়। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে।

সকালের নাস্তা কখন খাওয়া উচিত?

সকালের নাশতা অবশ্যই সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে। গবেষণায় দেখা, গেছে যে সকালের নাস্তাটি শরীরের বিপাকীয় কার্যে সহায়তা করে থাকে। তাই আপনি যদি ঘুম থেকে ওঠার ১ ঘন্টার মধ্যে আপনার সকালের নাস্তাটি সেরে ফেলেন তবে তা আপনার হজম ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং স্বাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন কমে? 

সকালে খালি পেটে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। এখানে কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা দেওয়া হলোঃ

লেবু পানিঃ সকালে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীরের বিপাকীয় হার বাড়ে এবং খাবার দ্রুত হজম হয়। এটি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে ফলে খাবারের পরিমাণও কম হয়।

চিয়া বীজঃ চিয়া বীজে প্রচুর ফাইবার থাকে যা অন্ত্রের জন্য উপকারী। রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে এটি পেট ভর্তি রাখে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে।

তিসি বীজঃ তিসি বীজ হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং এতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফাইবার থাকে যা ওজন কমাতে সহায়ক।

কাঠবাদামঃ কাঠবাদামে প্রচুর ফাইবার রয়েছে যা দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে এবং হজম ক্ষমতা বাড়ায়। 

ওটসঃ সকালে ভিজিয়ে রাখা ওটস খেলে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখে এবং ক্যালোরির মাত্রাও কম। 

আদা চাঃ আদা মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে যা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।

পেঁপেঃ খালি পেটে পেঁপে খেলে এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এর ক্যালরির পরিমাণ কম। 

দ্রুত ওজন কমে কি খেলে

যারা ডায়েট করতে চান তারা সকালে ২০০-৩০০ ক্যালোরি গ্রহন করতে পারেন। কমপক্ষে ৮ গ্রাম ফাইবার সকালের নাস্তায় রাখুন যেমনঃ ওটস। শর্করা (রুটি,কলা,আলু) কম ও প্রোটিন যেমনঃ ডিম,মাংস,বাদাম, ছোলা এসবের পরিমান বেশী রাখুন। 

সকালের নাস্তায় প্রোটিনের মাত্রা বেশি রাখলে বরং তা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। প্রোটিন অনেকটা সময় ধরে ক্ষুধা নিবারন করে। সকালে কখনই এমন ধরনের খাবার খাবেন না যেগুলো পেটে গ্যাস তৈরি করে। বরং পুষ্টিকর কিছু খাবার খান যা আস্তে আস্তে হজম হয় এবং সারাদিন আপনাকে কর্মক্ষম রাখে।

ওজন কমানোর জন্য সকালে কি খাওয়া উচিত? 

ওটস, ডিম ও সবজি দিয়ে খিচুড়ি করে খেতে পারেন। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তাদের জন্য দুধের সাথে ওটস ও ছোট করে কাটা কয়েক টুকরো (৪/৫) পাকা পেপে একটি ভালো ব্রেকফাস্ট। 

যারা লো কার্ব ডায়েটে আছেন তারা - 

  • অঙ্কুরিত ছোলা সেদ্ধ করে তার সাথে সালাদ (পেঁয়াজ, টমেটো, শসা, গাজর) মিলিয়ে খেতে পারেন।
  • একটি সেদ্ধ ডিম, এক বাটি শব্জি(আলু ও মিষ্টি কুমড়া ছাড়া) এবং টকদই,পুদিনা পাতা এবং শশার সালাদ খেতে পারেন। 
  • লাল আটার তৈরী মাঝারি সাইজের দুইটি রুটি, এক বাটি কম মসলাযুক্ত সেদ্ধ সবজি ও একটি ডিম/এক পিস মুরগীর মাংস রাখতে পারেন।অনেকে সকালে ভাত খেতে অভ্যস্ত। তাদের জন্য ভাতের বিকল্প হতে পারে চিড়া। 
  • টক দই, চিড়া, কলা এবং ৩-৪টা কাঠবাদাম থাকতে পারে আপনার ব্রেকফাস্টে। 
  • ১৫- ২০ মিনিট পর খেতে পারেন চিনি ছাড়া রং চা/ গ্রীন টি/ ব্ল্যাক কফি অথবা ঘরের তৈরী ফ্রেস অরেন্জ/ লেমন/ পাইনাপল জুস।

তবে ব্রেকফাস্টে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে যেসব খাবারঃ পরোটা,ভাত,নুডুলস,বাজার থেকে কেনা পাউরুটি,অতিরিক্ত চিজ/বাটার এবং মেয়োনিজ যুক্ত বার্গার/স্যান্ডোইজ/পিজ্জা,কোল্ড ড্রিংক্স, বাজার থেকে কেনা লবন ও চিনিযুক্ত ফলের জুস। 

শেষ কথা - দ্রুত ওজন কমানোর উপায়

মনে রাখবেন মেশিন চালানোর জন্য যেমন তৈল প্রয়োজন তেমনি আপনার শরীরের জন্য ফুয়েল হলো খাবার। বাজে তৈল ব্যবহারে মেশিন দ্রুত নষ্ট যায়, অস্বাস্থ্যকর খাবারে শরীর তো অকেজো হবেই! 

একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম ব্রেকফাস্ট আপনার সারাদিনের শক্তি যোগাবে। ফলে আপনি সারাদিন কাজে মন দিতে পারেন, ওজন কমানের জন্য ওয়ার্ক আউট বা ব্যায়াম করতে পারেন। সকালে না খেলেই মুটিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।

সকালে না খেলে দুপুরে অনেক বেশি মাত্রায় খাওয়া হয়ে যায়। একবারে অধিক খেলে হজম দেরিতে হয়,তাতে দেহে দ্রুত মেদ জমে।ব্রেকফাস্ট আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্যও ভুমিকা রাখে। তাছাড়া রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেও সকালে ভালো নাশতা করা জরুরী।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url